আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠন নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে গাজার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে দূষণ। বাসিন্দারা দূষিত পানি খেতে বাধ্য হচ্ছে।
কারণ ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নিরাপদ খাবার পানির উৎস দূষিত হয়ে পড়ছে। গাজার ক্রমবর্ধমান দূষণ বাসিন্দাদের ভয়ানক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় এবারের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগেই এ নিয়ে কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্রাজিলে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম আল-জেবেন বলেছেন, গাজার জনস্বাস্থ্য এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। ফলে উপত্যকায় পরিবেশগত অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলের হামলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ৬১ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে। এতে কিছু বিপজ্জনক পদার্থ রয়েছে, যা পরিবেশ দূষিত করছে। এছাড়াও পয়ঃনিষ্কাশন এবং পানি ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে ভূগর্ভস্থ ও উপকূলীয় পানির উৎস দূষিত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকার কৃষিজমির বেশিরভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে বাসিন্দারা এখন মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ত্রাণ সরবরাহ এখনও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল।
গাজার ওপর ইসরায়েলের যুদ্ধ কেবল পুরো এলাকা ধ্বংস করেনি, পরিবারগুলোকে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত করেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফিলিস্তিনিরা যে মাটি ও পানির ওপর নির্ভর করে তাও বিষাক্ত হয়ে গেছে। চার সপ্তাহ ধরে চলা ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যে পরিবেশগত ধ্বংসের মাত্রা বেদনাদায়কভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। পাইপলাইন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশিরভাগ জলাশয়ে দূষণ বেড়েছে। ফিলিস্তিনিরা তাদের পানীয় জলের দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ধ্বংসস্তূপ সরানোর সরঞ্জাম এবং ভারী যন্ত্রপাতির অভাবের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
ইসরায়েল গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। শনিবার মধ্য গাজার বুরেজে হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র আল-জাজিরাকে জানিয়েছে, সেখানে শরণার্থী শিবিরে সেনাবাহিনী গুলি করে তাকে হত্যা করে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধারকারীরা আগের হামলায় নিহত ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। অক্টোবর মাসে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা কমপক্ষে ২৬৪টি আক্রমণ চালায়, যা ২০০৬ সালের পর থেকে এক মাসে সর্বোচ্চ আক্রমণ।
গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৬১৪ জন। গত দুই বছরে হামলায় অন্তত ৬৯ হাজার ১৬৯ জন নিহত ও ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৫ জন আহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েল থেকে আরও ১৫ ফিলিস্তিনির মরদেহ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর ফলে যুদ্ধবিরতির সময় পাওয়া মৃতদের মোট সংখ্যা ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
মরদেহগুলোর মাত্র ৮৯ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এসব মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। অপরদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ সর্বশেষ একজন ইসরায়েলি সৈনিকের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে ফেরত দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, এখনও পাঁচজন বন্দির মৃতদেহ ফেরত পাঠানো বাকি আছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ লেবাননে নতুন ইসরায়েলি হামলায় ২ জন নিহত হয়েছেন। হামলা অব্যাহত রয়েছে। লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব লেবাননের আইন আতা এবং শেবা শহরের মধ্যে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই ভাই নিহত হন।
ইসরায়েলি হামলা গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল এখন বিকৃত হয়ে গেছে। চারপাশে ধ্বংস্তূপের পাহাড়। তবে এই ধ্বংসস্তূপের উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে কেউ ভাবছে না। গাজার শেখ রাদওয়ানের বাসিন্দা আবু আইয়াদ বিবিসিকে তার বাড়ি দেখিয়ে বলেন, ‘এটি ছিল আমার বাড়ি।
এটি এখন কংক্রিট ও স্টিলের খণ্ডিত স্তূপ। এই এলাকাটি একসময় গাজা শহরের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ পাড়া ছিল। আমার বাড়ির অবশিষ্ট কিছু আর নেই।’
গাজার পুনর্গঠন নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মনে হয়, ধ্বংসস্তূপ সরাতে ১০ বছর সময় লাগবে। হয়তো পুনর্গঠন না দেখেই আমরা মারা যাব।’
গাজা পুনর্গঠনে চ্যালেঞ্জের মাত্রা বিস্ময়কর বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি গাজার ক্ষতির মূল্য অনুমান করেছে ৫৩ বিলিয়ন পাউন্ড (৭০ বিলিয়ন ডলার)। জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টার উনোসাতের মতে, প্রায় তিন লাখ বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
মার্কিন থিঙ্ক ট্যাংক আরএএনডির সিনিয়র গবেষক শেলি কালবার্টশন মনে করেন, গাজা উপত্যকা কেবল দুবাইয়ের মতো করে গড়ে তুললেই হবে না। এখানে অনেক ঐতিহ্য রয়েছে, যা রক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তুরস্ক জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
শুক্রবার ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত ৩৭ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেনগভির এবং সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির।
Your Comment